আরাকান ষড়যন্ত্র ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
আহমেদুর রহমান মুরাদ :
আফগানিস্তানে তিনটি ও ইরাকে দুটি সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়া মার্কিন সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক আর্মির ডেপুটি কমান্ডার জোয়েল ভাওয়েল মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এপ্রিল শেষ না হতেই আরকান আর্মির জন্য মানবিক করিডোরের নামে খুলে দেওয়া হচ্ছে সামরিক করিডোর। এইভাবেই পুরো বাংলাদেশের পায়ে কুড়াল মেরে দিলো আমেরিকার ফাঁদে পড়ে।
মিলিটারি অ্যাটাশে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মাইকেল ইডি মিচিয়েই এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আরেকটি দল যমুনায় বৈঠক করলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অপারেশন ডিরেক্টর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আমিরুল আমিনের সংগে।এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর (ডিফেন্স কো অপারেশন অফিস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল হান্টার গ্যালাচার ও মেজর ইউয়ান লিওনার্ড। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল আরাকান আর্মির জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে একটি সামরিক করিডোর তৈরি করে দেওয়া। যেহেতু আরাকান আর্মির এই উত্থানের পেছনে আমেরিকা এবং তার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আরাকান রাজ্য স্বাধীন করে চীনকে বেকায়দায় ফেলে দেওয়া। বাংলাদেশ আমেরিকার পাতানো সেই ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছে।
আরাকান রাজ্যের ১৭ টি শহরের মধ্যে ১৪ টি ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি।বাকি তিনটি শহরের মধ্যে সিতওয়েতে ভারত কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট করে গভীর সমুদ্র বন্দর করেছে। কৌশলগত কারণে এটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে আরাকানের কিয়াউকপিউ বন্দর দিয়েই চীন বঙ্গোপাসাগর ও ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। অর্থনৈতিক ও সামরিক কৌশলগত দিক থেকে চীনের জন্য এই বন্ধরটি অনেকটা গলার শিরার মতো।এই বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হলে চীন অর্থনৈতিক ও সামরিক কৌশলগত দিক থেকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল ও গ্যাস আনা নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের কিয়াউকপিউ বন্দর চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। চীনের ???????????????????????????? ???????????????????????????????? ???????????????? এই কিয়াউকপিউ অঞ্চলে। চীন এই অঞ্চলের অবকাঠামো ও সামরিক খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। আরাকান আর্মি বাংলাদেশ ও আমেরিকার সাহায্য নিয়ে সিতওয়ে, কিয়াউকপিউ ও মানাঙং অঞ্চলে খুব বড় সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।তাই আরাকান আর্মিকে লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার অংশ হিসেবে এই প্রথমবার বাংলদেশে মার্কিন বড় বড় সামরিক কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফর।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আরাকানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডু দখল হওয়ার পর আরাকান আর্মি নাফ নদী পাড়ি দিয়ে দুইদিন বাংলাদেশে অবস্থান করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তখন আরাকান আর্মির সাথে একটি বৈঠক করেন। আমেরিকার বড় বড় সামরিক কর্মকর্তারা আরাকান নিয়ে একটি ওভিরভিউ নিয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং মার্কিন সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ও আরাকান সীমানা ঘুরে তাদের ম্যাপ তৈরি করে নিয়ে যায়। আমেরিকার প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ যে ভুলে পা দিয়েছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে চীন ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ লেগে গেলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। বাংলাদেশ জলন্ত আগুনের ভেতরে নিজেদের হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে।গত কিছুদিন আগে আরাকান আর্মির বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বান্দরবান সীমান্তের দশ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে জলকেলি উৎসব ছিল তার একটি ট্রেলার মাত্র।
আমেরিকা শুধু রাজনীতি করে না, ওরা রাজনীতি খেলায় । বহুদিন থেকেই আমেরিকা চীনকে দূর্বল করার জন্য আরাকান আর্মিকে গোপনে সহায়তা করে আসছিল। যেহেতু সিতওয়ে বন্দর ও কিয়াউকপিউ থেকে বাংলাদেশের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের দূরত্ব কম এবং সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনে সুবিধা তাই বাংলাদেশে তাদের একটি পছন্দের সরকার প্রয়োজন ছিল।এই সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আমেরিকা ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে অপারেশন বিডি প্রকল্প তৈরি করেছিলো।তাতে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ ইউএসএইড এর মাধ্যমে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের খরচ করে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষনা করেছেন। বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পরেই আমেরিকার আনাগোনা বেড়ে গেল। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বাংলাদেশে ফুল মুডে অ্যাক্টিভ হয়ে গেলো।
একের পর এক সফলতা পেতে শুরু করলো আরাকান আর্মি এবং কোনঠাসা হতে শুরু করলো মায়ানমারের জান্তা সরকার।
বাংলাদেশ খুব বড় একটা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছে যারপেছনে পুরো খেলাটাই খেলেছে আমরিকা। আমেরিকার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে সেন্টমার্টিনে তাদের নিজস্ব সামরিক ঘাটি তৈরি করার মাধ্যমে চীনের প্রায় ৬০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল আমদানির রুট বন্ধ করে দেওয়া। অপরদিকে আরাকান স্বাধীন হয়ে গেলে আরাকানের কিছু অংশ, ভারতের মণিপুর ও মিজুরামের কিছু অংশ এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে একটি বাফার খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে চিরদিনের জন্য এই অঞ্চলে তাদের ঘাটি তৈরি করে নেওয়া। আরাকান আর্মির সাথে ভারত ও চীন নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।যদি কোন কারণে এই অঞ্চলে আমেরিকার প্লান ও আরাকান আর্মি ব্যর্থ হয় তবে এর সম্পূর্ণ মাশুল গুনতে হবে বাংলাদেশকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজীবনের জন্য অন্য যেকোন পরাশক্তি রাষ্ট্রের দখলে চলে যাবে এটা নিশ্চিত।