
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | ব্রেকিং নিউজ | সম্পাদক বলছি » ফাতিমা হাসসুনা: একটি ক্যামেরা, একটি জীবন, একটি কণ্ঠস্বর যা চিরকাল প্রতিধ্বনিত হবে
ফাতিমা হাসসুনা: একটি ক্যামেরা, একটি জীবন, একটি কণ্ঠস্বর যা চিরকাল প্রতিধ্বনিত হবে
শফিকুল ইসলাম কাজল
ফাতিমা হাসসুনা: একটি ক্যামেরা, একটি জীবন, একটি কণ্ঠস্বর যা চিরকাল প্রতিধ্বনিত হবে
২৫ বছর বয়সী *ফাতিমা হাসসুনা* ছিলেন গাজার এক সাহসী ফটোসাংবাদিক, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার জন্য।
গত ১৮ মাস ধরে তিনি ডকুমেন্ট করেছেন ধ্বংসস্তূপ, বিমান হামলা, বাস্তুচ্যুতি এবং নিজের পরিবারের ১১ জন সদস্যকে হারানোর ব্যক্তিগত শোক।
তার একটি পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, যেন তা তার নিজের ভবিষ্যতেরই ইঙ্গিত:
“যদি আমি মারা যাই, আমি চাই আমার মৃত্যুটা গর্জে উঠুক। আমি চাই না, আমি কেবল একটি খবরের শিরোনাম বা পরিসংখ্যানে পরিণত হই। আমি চাই এমন এক মৃত্যু, যা সারা বিশ্ব শুনবে, যার প্রভাব কালজয়ী হবে, এবং এমন একটি ছবি যা সময় বা স্থান মুছে দিতে পারবে না।”
মৃত্যুর মাত্র একদিন আগে তিনি জানতে পারেন, তার জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত ডকুমেন্টারি *”Put Your Soul on Your Hand and Walk”* *কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ইরানি পরিচালক *সেপিদে ফারসিনতাকে ফোন করে এই সুখবর জানান এবং উৎসবে আমন্ত্রণ জানান।
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ফাতিমা *ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন*, এবং তার সঙ্গে তার *পরিবারের আরও ১০ জন*, যার মধ্যে তার *গর্ভবতী বোন*ও ছিলেন।
একটি ডকুমেন্টারি, জীবনের এক জীবন্ত দলিল
পরিচালক ফারসি বলেন:
“সে ছিল আলোয় ভরা—আগুনের মতো উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। আমি তার হাসি, কান্না, আশা এবং হতাশা—সবকিছুই ক্যামেরায় ধারণ করেছি। সে হয়ে উঠেছিল গাজায় আমার চোখ।”
কান ACID চলচ্চিত্র উৎসব* এক আবেগঘন বিবৃতিতে জানায়:
“তার হাসি ছিল মায়াবী, তার দৃঢ়তা ছিল বিস্ময়কর। সে আমাদের জন্য সাক্ষ্য রেখে গেছে—ছবি তুলে, বোমার নিচে খাবার বিতরণ করে, শোক আর ক্ষুধার মধ্যেও বাঁচতে বাঁচতে।
আমরা প্রতিবার তাকে পর্দায় জীবিত দেখলে আনন্দে উদ্বেল হই। আর প্রতিবারই তার জন্য আতঙ্কও কাজ করে।”*
শেষ অনুরোধ, একটি বিদায়ের কবিতা
মৃত্যুর আগে, ফাতিমা গাজার কবি *হায়দার আল-গাজালিকে বলেছিলেন,
“যদি আমি মারা যাই, আমার জন্য একটি কবিতা লিখো।”
তার সেই কবিতায় এক “নরম, শান্তিময় পরজগতে” পৌঁছানোর চিত্র ফুটে ওঠে:
“আজকের সূর্য আর কারও ক্ষতি করবে না।
টবে রাখা গাছেরা সাজবে একজন কোমল অতিথির জন্য। সূর্য যথেষ্ট উজ্জ্বল থাকবে যেন মায়েরা কাপড় শুকাতে পারে,
আবার যথেষ্ট ঠাণ্ডা থাকবে যেন শিশুরা সারাদিন খেলতে পারে।
আজকের সূর্য কারও ওপর কঠোর হবে না।”*
আমরা ভুলবো না ফাতিমা শুধু একজন সাংবাদিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন *একটি প্রতিরোধের মুখ, একটি লেন্স, একটি অম্লান কণ্ঠস্বর*।
যুদ্ধ হয়তো তার জীবন কেড়ে নিয়েছে, কিন্তু *তার গল্প, তার ছবি, তার সত্য*—*নীরবতাকেও হার মানাবে।*
**#FatimaHassouna
#GazaVoices
#JournalismIsNotACrime