শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

Daily Pokkhokal
বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » রাজনীতি » মহিলা দলের কমিটি নিয়ে এবার নতুন বিতর্কে বিএনপি
প্রথম পাতা » রাজনীতি » মহিলা দলের কমিটি নিয়ে এবার নতুন বিতর্কে বিএনপি
২৭৪ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মহিলা দলের কমিটি নিয়ে এবার নতুন বিতর্কে বিএনপি

---
পক্ষকাল সংবাদঃ

 

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না বিএনপির। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে দলের মধ্যে অসন্তোষ। আর স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য আ স ম হান্নান শাহর মৃত্যুর দিন এ কমিটি ঘোষণার ফলে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে বইছে সমালোচনার ঝড়। বলা হচ্ছে, এই দল কাউকে সম্মান করতে জানে না।

নতুন কমিটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সমর্থকরা প্রাধান্য পেয়েছেন। তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে করা হয়েছে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। আর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর হাত ধরে হাঁটেন, শুধু এ কারণে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সুলতানা আহমেদকে। অথচ ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে মহিলা দলের রাজনীতিতে আসা আলোচিত নেতাদের কমিটির শীর্ষ পদগুলো থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, আফরোজা-সুলতানার নেতৃত্বাধীন কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে মহানগরী বিএনপির সাবেক নেতা সাদেক হোসেন খোকার সমর্থকদের। মহিলা দলের মধ্যে খোকার ঘোরতর সমর্থক ছিলেন আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা। তাঁকে নতুন কমিটিতে রাখাই হয়নি। গত আগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন শিরিন। মূলত ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তিনি ওই পদ ছাড়েন। মহিলা দলের সভাপতির পদ পাওয়ার আশা ছিল তাঁর।

জানতে চাইলে শিরিন সুলতানা বলেন, ‘দল যা ভালো মনে করেছে তাই করেছে। এখন হয়তো আর রাজনীতি করব না। তা ছাড়া করার পরিবেশও রাখা হয়নি। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যের মৃত্যুর দিন কিভাবে ওই কমিটি ঘোষণা করা হলো তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন ১৯৯৪ সাল থেকে মহিলা দল করা শিরিন। তিনি বলেন, দুই-তিনটি দিন অপেক্ষা করলে কী এমন ক্ষতি হতো।

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, রোম যখন পোড়ে সম্রাট নিরো তখন বাঁশি বাজায়-বিএনপির এখন এই অবস্থা। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, দলের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতার মৃত্যুর দিন কমিটি ঘোষণা করে মহিলা দল কী এমন কৃতিত্ব প্রদর্শন করবে বুঝতে পারছি না। তাঁর মতে, আসলে বিএনপি এ পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাকেই সম্মান দেখাতে পারেনি। কমিটি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সহস্বনির্ভর বিষয়ক এই সম্পাদকের মন্তব্য, ‘সকালের সূর্য দেখলেই বোঝা যায়, দিনটি কেমন যাবে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না

সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া ঘোষিত কমিটিকে ‘আব্বাস-গয়েশ্বরে’র কমিটি বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘মির্জা আব্বাসের স্ত্রী হিসেবে আফরোজা আব্বাস সভাপতির পদ পেয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদের স্ত্রী হিসেবে আমি কোনো পদই পেলাম না।’

ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের কঠোর সমালোচনা করে আশির দশকের এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘১৯৯৭ সালে মোসাদ্দেক আলী ফালুর হাত ধরে রাজনীতিতে এসে তিনি আজ মহিলা দলের বড় পদ পান। অথচ দলে তিনি প্রচণ্ড বিতর্কিত। তাঁর ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু আমরা জেল-জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করে বঞ্চিত হয়েছি।’ এই দল করে কী লাভ-প্রশ্ন তোলেন নবম সংসদে বক্তৃতায় ঝড় তোলা এই সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, হান্নান শাহর মৃত্যুর দিন মহিলা দলের কমিটি ঘোষণা করায় সর্বস্তরে এই বার্তা গেল যে বিএনপি তার নেতাদের সম্মান করতে জানে না।

উল্লেখ্য, শিরিন সুলতানার মতো পাপিয়াও গত আগস্টে সহমানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদকের পদের পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়েন। ফলে বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটিতে এখন শিরিনের পাশাপাশি পাপিয়াও নেই।

মহিলা দলের ঘোষিত কমিটির ব্যাপারে দলের বেশির ভাগ সিনিয়র নেতার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা জানা গেছে। তাঁদের মতে, মহিলা দলে শিরিন সুলতানার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তাও কিছুটা সমর্থনযোগ্য হতো যদি তাঁর বদলে রেহেনা আক্তার রানু, রানুর বদলে আসিফা আশরাফি পাপিয়া, কিংবা পাপিয়ার বদলে নিলোফার চৌধুরী মনিকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা হতো। কিন্তু যাঁদের আনা হয়েছে তাঁরা কখনো ছাত্রনেতাও ছিলেন না। দু-একজনের শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও ঘাটতি আছে।

কমিটির ব্যাপারে দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, আসলে সাংবাদিকদের ভয়ে তিনি ফোনই ধরছেন না। কারণ হলো, স্থায়ী কমিটির একজন নেতার মৃত্যুর দিন ঘোষিত কমিটির ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে তাঁকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। তা ছাড়া মহিলা দলের কমিটি নিয়েও সংকট; কারণ ‘ভালো হয়নি’ বললে খালেদা জিয়া অসন্তুষ্ট হন। আবার ‘ভালো হয়েছে’ এ কথা বললে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর কাছে অজনপ্রিয় হতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা বলেন, আসলে যাঁদের নেতৃত্বে কমিটি হয়েছে তাতে একে ভালো বলার কোনো কারণ নেই। কারণ একজনের পরিচয় আব্বাসের স্ত্রী; আর অন্যজন খালেদা জিয়ার হাত ধরেন-এই তাঁদের পরিচয়।

সূত্র মতে, মহিলা দলের কমিটি নিয়ে মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ আব্বাস সমর্থকদের দৌড়ঝাঁপ গুলশান কার্যালয়ে বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে গত জাতীয় কাউন্সিলের পর শিরিন সুলতানা ও রেহেনা আক্তার রানুর সঙ্গে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মতবিরোধের সূত্র ধরে দলের ওই অংশটি তত্পরতা শুরু করে। কারণ ওই ঘটনার পর খালেদা জিয়া শিরিনের বদলে সুলতানার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করেন। ওই পরিস্থিতিতে সুলতানার প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ তৈরি হলে আব্বাসপন্থীরা তা কাজে লাগানোর চেষ্টা চালায়। তাঁরা আফরোজা আব্বাস ও সুলতানার নেতৃত্বে কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা নিয়ে যান খালেদার কাছে। আর খালেদাও তাতে রাজি হন।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)