যুদ্ধ নয়, মানবতার জয় হোক—ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে বিশ্ব কী বার্তা দিচ্ছে?
শফিকুল ইসলাম কাজল :
২০২৫ সালের মধ্যভাগে এসে বিশ্ব আবারও এমন এক সঙ্কটের মুখোমুখি, যেখানে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা হঠাৎ করেই বাস্তব বলে মনে হচ্ছে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে চলমান হামলা-পাল্টা হামলা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এর পেছনে যেমন প্রতিশোধ, নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক আধিপত্যের লড়াই রয়েছে, তেমনি বড় প্রশ্ন হলো—মানবতা কোথায়?
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অন্তত দুই-তিন বছর পিছিয়ে দিয়েছে। পাল্টা হামলায় ইরানও জানিয়ে দিচ্ছে যে, তারা একতরফা নিস্তেজ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতিকে নিজের রাজনৈতিক লাভের দিকে টানতে গিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন—”দুই সপ্তাহ সময় দিন, ভাবছি কী করব।” এমন কূটনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সামরিক দম্ভ পৃথিবীকে একটি অনিবার্য বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ইরান থেকে মার্কিন নাগরিকদের প্রত্যাহার, ইসরায়েলি শহরজুড়ে সাইরেন, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আতঙ্ক—সবই প্রমাণ করে এই যুদ্ধ কোনো ন্যায্যতার পথে চলা নয়। এই যুদ্ধ মানবতাকে পিষ্ট করছে, ভয় আর অবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলছে।
আরও হতাশাজনক বিষয় হলো, এই পুরো পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা অন্য কৌশলগত শক্তিগুলোর ভুমিকা প্রায় নিষ্ক্রিয়। আলোচনা বা মধ্যস্থতা নয়, বরং বিশ্ব যেন ব্যস্ত কবে কে হামলা করল তা গুনতে।
এ মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক কূটনীতির সক্রিয়তা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও ইউরোপকে সম্মিলিতভাবে একটি নিরপেক্ষ শান্তি পরিকল্পনা দাঁড় করাতে হবে। শুধু রাজনৈতিক বিবৃতি নয়—অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করতে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
যুদ্ধের অজুহাতে কেউ যেন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে—এই বার্তাই হোক আজকের বিশ্ব বিবেকের আহ্বান।সিদ্ধান্ত স্পষ্ট—শান্তি নয় তো সর্বনাশ।
মানবতার মুখোমুখি এই পরীক্ষা যেন না হয়ে ওঠে এক ইতিহাসের গ্লানিময় পুনরাবৃত্তি।