মানবিক করিডর এবং তার পরিণতি
‘মানবিক করিডর’ এর পরিণতি :
বিপ্লবী বার্তা ফেসবুক পোস্ট থেকে :
মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল বি ভোয়েলের অকস্মাৎ বাংলাদেশে এসে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক করে যাওয়া, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনীয় গুতেরাস-এর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন, এর সবটাই হচ্ছে বে অব বেঙ্গলের জল ঘোলা হওয়া নিয়ে জিওপলিটিক্যাল পিকচার বলছে; এই অঞ্চলে চলছে বিশ্বের সবচেয়ে ধুন্ধমার জিওপলিটিক্যাল মাইন্ডগেম। সেই গেম-এ ফেঁসে গেছে বাংলাদেশ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে-চার চারটি সুপার পাওয়ারের ফ্যাটাল ওয়ারের ‘ওয়ারফিল্ড’ হতে চলেছে বাংলাদেশ ভূখণ্ড। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে। রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র আরাকান আর্মিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেয় না, তবে রাখাইন রাজ্যের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে মিয়ানমারের সামরিকজান্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগ রাখে। এবার তারা বাংলাদেশকে ‘বেজ ক্যাম্প’ বানিয়ে রাখাইনে মানবিক সহায়তা দিতে করিডোর চায়। শুনতে নিরীহ মনে হলেও সত্য হলো মানবিক সহায়তার নামে পাঠানো হবে যুদ্ধাস্ত্র। মার্কিনের দাবী অনুযায়ী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান রাখাইন স্টেটে মার্কিন লজিস্টিক পৌঁছানোর করিডোর দিতেও সম্মত হয়েছেন। এই করিডোর দিয়ে লজিস্টিকের নামে মানবিক সাহায্য ও উইপনস যাবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আরসা নেতাকে রাজি করিয়েছে যেন তারা অতীতের ভেদাভেদ ভুল একযোগে মিয়ানমার সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সে জন্য ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ক্যাডারও প্রস্তুত করা হয়েছে হালকা প্রতিশক্ষণ দিয়ে। টেকনাফের উপরে শিলখালিতেই হতে যাচ্ছে সেই করিডোর এরকম একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।।
যদিও কাগজে-কলমে বলা হচ্ছে “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরাসরি জুন্টা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। তারা করিডোর পাহারা দেবে, আরাকান আর্মির কাছে লজিস্টিক পৌঁছানোর ব্যাকআপ ফোর্স হিসাবে কাজ করবে।“ অর্থাৎ আরাকান আর্মি, আরসা ও আমেরিকান মেরিনদের উপর জুন্টা বাহিনী হামলা করলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যাকআপ দেবে। যুদ্ধের পরিভাষায় একে বলে ‘প্রক্সি ওয়ার’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ওই প্রক্সি ওয়ারে জড়িয়ে যেতে চলেছে।।জনশ্রুতি আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পিত -“বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা অংশ, ভারতের মিজোরামের একটি অংশ ও মিয়ানমার মিলে একটা খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানাবে। বঙ্গোপসাগরে একটা ঘাঁটি করবে।। মিজোরামের চিফ মিনিস্টার যে স্টেটমেন্টে বলেছিলেন- “২হাজার ফরেনার এসে গায়েব হয়ে গেছে।“ সেটা কো-ইন্সিডেন্স ছিল না। মণিপুরে কুকিল্যান্ড কোনও কো-ইন্সিডেন্স ছিল না। ত্রিপুরার রাজা প্রদ্যোত দেব বর্মণ যখন কেন্দ্রকে বলেন-“সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হুমকির ভার আমার উপর ছেড়ে দিন, আমি দেখে নেব।“ সেটা কো-ইন্সিডেন্স ছিল না।
আরাকান আর্মির বাংলাদেশ সীমানা লঙ্ঘন, চিন বিদ্রোহীদের মিজোরামের সঙ্গে মার্জ করা, চিন-কুকি-মিজো মিলে আলাদা স্টেট, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ ‘আরসা’ চিফকে বাংলাদেশ আগমন , রোহিঙ্গা-আরাকানীদের দীর্ঘদিনের বৈরীতা ভুলে একসঙ্গে যুদ্ধে নামার অঙ্গিকার করানো, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ফোর্টিফাই রাইটস’ বাংলাদেশ সরকার, সেনাবাহিনীকে আরাকান আর্মির জন্য করিডোর দেওয়ার আহ্বান জানানোর মত ঘটনাবলি আসল রূপ নিতে যাচ্ছে।।বাংলাদেশের ভেতরে একটা ম্যাসিভ কোয়ালিশ বানাতে যাচ্ছে আমেরিকা। যার বেজ ক্যাম্প হবে কক্সবাজারের শিলখালিতে।
রাখাইন স্টেটের যে অংশটুকু এখনও রাশিয়ার সহায়তায় চীনের দখলে রয়েছে সেই অংশ অর্থাৎ সিটওয়ে পোর্ট এবং কিয়াউকপিউ পোর্ট মুক্ত করতে এক ম্যাসিভ ওয়ার শুরু করতে যাচ্ছে। কারা কারা এই যুদ্ধ শুরু করবে জানলে চমকে উঠতে হবে!, বুদ্ধিস্ট আরাকান আর্মি, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপ ‘আরসা’, সাথে খ্রিস্টান চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এদের ব্যাকআপ দেবে বাংলাদেশের ৩ ডিভিশন আর্মি। এখানে আমেরিকার ‘গেম প্ল্যান’ পরিষ্কার। তারা সবকটি রিবেল গ্রুপকে এক ছাতার নিচে এনে একটা শক্তিশালী আক্রমণ করে সিটওয়ে এবং কিয়াউকপিউ পোর্ট মুক্ত করতে চায়। এটা হলেই রাখাইনের পুরোটা মিয়ানমুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ আরাকান স্টেট হয়ে যাবে। যার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে আমেরিকার হাতে। অর্থাৎ চীনের ৯ বিলিয়ন ডলারের বিশাল কিয়াউকপিউ প্রজেক্ট, ভারতের সিত্তেকেন্দ্রিক ‘কালাদান বন্দরের এবার দখলে নিতে চায় আমেরিকা।
রাখাইন সম্প্রদায়ের বৌ’দ্ধ ধর্মাবলম্বী স’শ’স্ত্র গ্রুপ হলো আরা’কান আর্মি। যারা ইতিপূর্বেও বাংলাদেশ সীমান্তে ফায়ার করেছে ও সেই গু’লিতে বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হয়েছে। বেশ কদিন আগেও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের বসতঘরে আ’রাকান আর্মির গু’লি এসে পড়ে যা স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি করে। আরা’কান আর্মি রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৯০% এলাকা নিয়ন্ত্রণে করে এবং মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের পুরো ২৭১ কিলোমিটার অংশ তাদের দখলে রয়েছে। করিডোরের মাধ্যমে মানবিক ও প্রত্যাবর্তন সহায়তা নিশ্চিত হলেও যদি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকে বৌ’দ্ধ ধর্মাবলম্বী আরাকান সশ’স্ত্র গোষ্ঠী অ’স্ত্র, গো’লাবারদ, মা’দক সহ নানান অবৈধ জিনিস সরবরাহ করতে এটিকে সাপ্লাই লাইন হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাতে পারে।
এই করিডোরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন অপশক্তি বাংলাদেশকে একটি প্রক্সি যু’দ্ধে’র ময়দানেও পরিণত করতে পারে যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য ভয়াভহ ভূ-রাজনৈতিক সংকটে হিসেবে দেখা দিবে। রো’হি’ঙ্গা ইস্যুতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে রাজনৈতিক দলগুলোই স্বাগত জানিয়েছে। সেই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ-পরামর্শ না করে রাষ্ট্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদী সরকার যদি নিতে চায় অবশ্যই সেটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।।
“আন্তঃদেশীয় করিডোর একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এতে বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব ও সামরিক নিরাপত্তার প্রশ্ন যুক্ত। বিশ্বের সর্বত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ‘মানবিক করিডোর’ শেষমেশ সামরিক তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়ে যায়। ফলে প্রস্তাবিত এই উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সেটি দীর্ঘ মেয়াদে উভয় দেশের জনগণের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।”