
বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » নব্য জেএমবির নতুন আমির ‘আইয়ুব বাচ্চু’
নব্য জেএমবির নতুন আমির ‘আইয়ুব বাচ্চু’
পক্ষকাল ডেস্কঃ নেতৃত্বশূন্য জেএমবিকে যে নতুনভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তার সাংগঠনিক নাম আইয়ুব বাচ্চু ওরফে মামুন ওরফে হাবিবুর রহমান। বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সে, দিচ্ছে নির্দেশনা। ছদ্মনামধারী এই ব্যক্তিকে এখন খুঁজছেন গোয়েন্দারা। তাকে গ্রেফতার করতে বেশ কয়েকটি অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ছদ্মবেশী আইয়ুব বাচ্চুই নব্য জেএমবির নতুন আমির। দলটির শীর্ষ নেতা মাঈনুল ইসলাম মুসা চলতি বছরের ২৯ মার্চ মৌলভীবাজারে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অপারেশন হিট ব্যাকে নিহত হওয়ার পর সে সংগহাল ধরেছে। মৌলভীবাজার থেকে সিলেটের
শিববাড়িতে গিয়ে সে জঙ্গি বোমা হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল। নতুন নেতা বাচ্চু ছিল এ সময় তার বিশ্বস্ত সহচর।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আইয়ুব বাচ্চু নামধারী এক জঙ্গিকে একাধিক সংস্থা খুঁজছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য বলছে, মুসার পর সে-ই নব্য জেএমবিকে নেতৃত্ব দিয়ে সক্রিয় রাখছে। আইয়ুবের ব্যাপারে আরও তথ্য পেতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে আট বছরের বেশি সময় ধরে খোঁজ রাখেন এমন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সমকালকে জানান, মৌলভীবাজারের অপারেশনে নব্য জেএমবির তৎকালীন আমির মুসা নিহত হওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছিল সংগঠনটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে। পরে গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, আইয়ুব বাচ্চুর নেতৃত্বে নব্য জেএমবি পুনরায় অপতৎপরতা শুরু করেছে।
নতুন আমির আইয়ুব বাচ্চু সম্পর্কে যেসব তথ্য মিলেছে, সেসব থেকে গোয়েন্দারা মনে করছেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলায় গ্রামের বাড়ি তার। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত আইয়ুব একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করতে পারেনি। পরে সে ব্যবসা শুরু করে। সাবেক আমির মুসার সময় আইয়ুব বাচ্চু তার সেকেন্ড-ইন কমান্ড ছিল। নব্য জেএমবির সদস্যদের মনোবল চাঙা করতে তারা একসঙ্গে দেশের বেশ কিছু এলাকায় সফর করে। দেশের পার্বত্য এলাকা থেকেও অনেক সদস্য রিত্রুক্রট করে তারা।
মুসা নিহত হওয়ার পর আইয়ুব বাচ্চু রাজধানীর অদূরে সাভার, গাজীপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় নব্য জেএমবির আস্তানায় অবস্থান করে। অনলাইনে জঙ্গি সংগঠনে সদস্য রিত্রুক্রট করার কাজ চালানোর পাশাপাশি নব্য জেএমবির জন্য অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহের চেষ্টা করছে সে। এ লক্ষ্যে সে সীমান্তবর্তী জেলার চোরাচালান চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, এরকম তথ্যও মিলেছে। এরই মধ্যে তাকে গ্রেফতারে বেশ কয়েকটি আস্তানায় অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ।
২০১৩ সালে কানাডা থেকে দেশে ফিরে জেএমবিকে নতুনভাবে চাঙ্গা করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জে অপারেশন হিট স্টর্ম-২৭-এ তামিম চৌধুরী তার দুই সহযোগীসহ নিহত হওয়ার পর অল্প কিছুদিনের জন্য নব্য জেএমবির সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে সারোয়ার জাহান মানিক। পরে সাভারে র্যাবের অপারেশনের পর মানিক মারা যায়। এরপর সংগঠনের দায়িত্ব নেয় রাজশাহীর বাগমারার বাসিন্দা মাঈনুল ইসলাম মুসা।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, গত মার্চ ও এপ্রিলে দেশের বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু আস্তানায় একটানা অভিযান চালানো হয়। ১৬ মার্চে সীতাকুণ্ডে অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬, ২৯ মার্চ মৌলভীবাজারে অপারেশন হিটব্যাক, ১ এপ্রিল মৌলভীবাজারে অপারেশন ম্যাক্সিমাস, ২২ এপ্রিল ঝিনাইদহে অপারেশন সাউথ-প, ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঈগল হান্ট ও ৭ মে ঝিনাইদহে অপারেশন শাটল স্পিল্ট পরিচালিত হয়। সর্বশেষ গত ২৬ মে সাভারে একাধিক আস্তানায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। গোয়েন্দারা বলছেন, রমজান মাসেও উগ্রপন্থি সংগঠনের কার্যক্রমের ওপর থাকছে কঠোর নজরদারি। এদিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস রমজানে বিভিন্ন দেশে হামলা করতে সংগঠনের সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে তাদের ওয়েবসাইটে বার্তা প্রকাশ করেছে।
এ ব্যাপারে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে জঙ্গি হামলার ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো হুমকি নেই। তবে তারা যাতে আবারও বড় ধরনের কোনো হামলা চালানোর মতো শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে, সে ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’