শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

Daily Pokkhokal
শনিবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » এনবিঅারে গোলামের দুর্নীতি, তদন্তে দুদক
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » এনবিঅারে গোলামের দুর্নীতি, তদন্তে দুদক
২৭৯ বার পঠিত
শনিবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

এনবিঅারে গোলামের দুর্নীতি, তদন্তে দুদক

---পক্ষকাল প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিদায়ী চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের অনিয়ম-দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য, ঘুষ, লুটপাট- অর্থপাচার ও স্বজনপ্রীতিতে ডুবেছে দেশের রাজস্বখাত। এ বিষয়ে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত চলছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। ফলে বিদায় নিয়েই দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন অর্থ মন্ত্রণালয়লের অভ্যান্তরীণ সম্পদ বিভাগের বিদায়ী সচিব গোলাম হোসেন। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও অভিযোগ করেছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে। এ অবস্থায় সরকারের রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান এনবিআর চলতি অর্থবছরে গত ৫ বছরে মধ্যে সর্বোচ্চ রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছে। এ নিয়ে দুশ্চিতায় সরকার। তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এনবিআরের তথ্যমতে, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভাল থাকা সত্বেও চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সরকারের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। এই সময়ে ৪৯ হাজার ২০৮ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। তবে এনবিআরের একাধিক সদস্য ও কমিশনার (কর, শুল্ক ও ভ্যাট) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, রাজস্ব আদায়ের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তারসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারিতে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণের সঙ্গে মিল নেই। এক্ষেত্রে সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, ৫ মাসে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো, তা আদায় দেখিয়ে এনবিআরে পাঠাতে। রাজস্ব আদায় দেখানের জন্য পরিসংখ্যানে কারচুপি করা হয়েছে বলেও সূত্র জানায়।
এদিকে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসের রাজস্ব ঘাটতি প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন অতিসম্প্রতি বলেছিলেন, ডিসেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ হবে। একই সঙ্গে রাজস্ব ঘাটতি আরও কমে আসবে বলে দাবি করেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আসা এই সচিব।
তবে গত ৩ জানুয়ারি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) প্রকাশিত ‘স্টেট অব দ্যা ইকনোমি ২০১৪-১৫ অর্থবছর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেষে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি ২৫ হাজার কোটি টাকা হবে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। প্রত্যাশিত রাজস্ব আয় করতে বাকি সময়ে রাজস্ব আয় ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে বছর শেষে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। ফলে বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়েও সরকারকে অনেকটা বেগ পেতে হবে।
এদিকে গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই সময়ে ৪৯ হাজার ২০৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা (সাময়িক)। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে কম আদায় হয়েছে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা।
সূত্রমতে, গোলাম হোসেন এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত দুটি অর্থবছরে মূল বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধিত বাজেটে কমানো হয়েছে। এমনকি সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে আনার পরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ফলে গত মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়ে বিগত ২০১২-১৩ অর্থবছরে। সে অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। গেলাম হোসেন ব্যর্থতার ছাপ পড়েছে গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরেও। এই অর্থবছরেও ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়ে সরকার। অথচ এরআগের তিন অর্থবছরের মধ্যে দুই অর্থবছরেই মূল বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা না কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে। সেই বাড়ানো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পর আরও বেশি রাজস্ব আদায়ে সক্ষম হয়েছিলো তখনকার এনবিআরের কর্মকর্তারা।
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবার বিগত ২০০৯-১০ অর্থবছরেই এক হাজার ৪২ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় হয়। এ অর্থবছরে মূল ও সংশোধিত বাজেটের টার্গেট ৬১ হাজার কোটি টাকা থাকলেও আদায় হয়েছে ৬২ হাজার ৪২ কোটি টাকা। পরে ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল বাজেটের টার্গেট ৭২ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা থাকলেও, সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা করা হয়। এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সে বছর রাজস্ব আদায় হয় ৭৯ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। অর্থ্যাৎ তখন ৩ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় হয়। এরপর ২০১১-১২ অর্থবছরে মূল বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৯১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৯২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সে অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। অর্থ্যাৎ সেই অর্থবছরেও ২ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে সরকারের অব্যাহত সাফল্যের মুখে এনবিআরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন গোলাম হোসেন। এরপরই গত দুটি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়ে সরকার। এই দুটি অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। অথচ এই অর্থ আদায় হলে সরকার বেশ কিছু উন্নয়ন মূলক প্রকল্প হাতে নিতে সক্ষমত হতো বলে মনে করেন সংশি¬ষ্টরা।
জানা গেছে, দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সরকার ভয়াবহ রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়েছে। আগামীতে রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়ার এই ধারবাহিকতা অব্যাহত থাকলে পুরো অর্থবছর শেষে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির যে আশঙ্কা সিপিডি করেছে, তারসঙ্গে একমত পোষণ করেছেন এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তা- অর্থনীতিবিদ ও ব্যবাসয়ীরা।
রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে রাজস্ব বোর্ডের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সম্প্রতিককালে মাঠ পর্যায়ের ২৭ কমিশনার বদলী নিয়ে রাজস্ব প্রশাসনে চরম অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। তারই প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ের ওপর। এদিকে প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর আদায়ে দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে কর প্রশাসনে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সরকারও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।
এ অবস্থায় রাজস্ব প্রশাসনের বিশৃক্ষল পরিস্থিতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে গতবছর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে পাওয়া সচিব পদাধিকার বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিদায়ী চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেককে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এক ডিও লেটার প্রেরণ করেন ক্ষুদ্ধ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এ প্রসঙ্গে তখন অর্থমন্ত্রী সচিবলায়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সাধারণভাবে এ রকম সময়ে প্রতিবছরই রদ-বদল করা হয়ে থাকে। কিন্তু একজন বিদায়ী চেয়ারম্যানের এটা করা উচিত নয়। এ কারণে এটা স্থগিত করা হয়েছে।
গতবছর ২৭ অক্টোবর অর্থমন্ত্রীকে না জানিয়ে কর গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালকসহ ২৭ জন করকমিশনারকে রদবদল করেন গোলাম হোসেন। এছাড়াও তিন অতিরিক্ত কমিশনারকে পদন্নোতি দিয়ে কমিশনার করা হয়। এতেই ক্ষুদ্ধ অর্থমন্ত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই ডিও লেটারে লিখেছিলেন, ‘প্রিয় সহকর্মী, অদ্ভুত একটি কান্ড হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে। বিদায়ী চেয়ারম্যান, যার চুক্তিভিত্তিক চাকরি জানুয়ারির শুরুতে শেষ হবে, তিনি আয়কর বিভাগের কমিশনারদের সারা দেশব্যাপী পদ পরিবর্তনের নির্দেশ জারি করেছেন। তারপর যিনি এই পদে বসবেন তিনি হয়তো এই রকম কাজ করতে কিছুটা সময় নেবেন। সচরাচর এমন সময়ে ব্যাপক পদ পরিবর্তন হয় না।
আমার প্রশ্ন হলো, বিদায়ী কর্তাব্যক্তির এটা করা কী উচিত হয়েছে? এই নির্দেশ কী কার্যকর করতে দেওয়া উচিত? পদায়নের বিষয়ে সচিবই আসল ব্যক্তি। সেখানে মন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, এই নির্দেশের কার্যকারিতা অন্তত নতুন চেয়ারম্যান না আসা পর্যন্ত বন্ধ রাখা শুধু উচিতই নয়, বাধ্যতামূলক। এত ব্যক্তির পদ পরিবর্তন অবশ্যই আর্থিক হিসেবে ব্যয়সাপেক্ষ।’
ওই ডিও লেটারে একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী বিদায়ী সচিবদের ক্ষমতা কমাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি প্রস্তাব দেন। সে প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা একটি উপায় খুঁজে বের করুন, যাতে এই নির্দেশের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে বন্ধ করা যায়।’
অর্থমন্ত্রীর এই ডিও লেটার নিয়ে হইচই পড়ে প্রশাসনের সর্বস্তরে। তখন ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে নিজের ভুল ও ব্যার্থতা স্বীকার করে এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন এক আদেশে ২৭ কমিশনারের রদবদলের নির্দেশনা স্থগিত করেন। তবে ওই আদেশে তারিখ উলে¬খ করা হয় ৩০ অক্টোবর।
এ প্রসঙ্গে তখন এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন নিজের ভুল স্বীকার করে বলেছিলেন, রদবদলের বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকে জানাতে ব্যর্তয় হয়েছিলো।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)