শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Daily Pokkhokal
বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » ই-পেপার | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » কমরেড চে গুয়েভারা শুভ জন্মদিন, লাল সালাম
প্রথম পাতা » ই-পেপার | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » কমরেড চে গুয়েভারা শুভ জন্মদিন, লাল সালাম
১০৪৩ বার পঠিত
বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

কমরেড চে গুয়েভারা শুভ জন্মদিন, লাল সালাম

---
পক্ষকাল সংবাদ
“হাস্যকর লাগার একটি ঝুঁকি নিয়েই বলতে চাই যে, একজন সত্যিকার বিপ্লবী পরিচালিত হয় একটি গভীর ভালবাসা থেকে। এটা চিন্তা করাও অসম্ভব যে এই গুণটি ছাড়া কেউ প্রকৃত বিপ্লবী হতে পারে।”- আর্নেস্তো চে গুয়েভারা।
“At the risk of seeming ridiculous, let me say that the true revolutionary is guided by a great feeling of love. It is impossible to think of a genuine revolutionary lacking this quality.”
- Ernesto Che Guevara.

হ্যাঁ, এই হচ্ছেন কমরড ‘চে’। পৃথিবীর তাবৎ অসহায়-নির্যাতিত মানুষদের প্রতি গভীর ভালোবাসার মহৎ অনুভূতির দ্বারা পরিচালিত ‘চে’ মনে করতেন এই মহৎ গুণের অধিকারী ছাড়া একজন প্রকৃত বিপ্লবী হতে পারে না। ভালোবাসার এই মহৎ অনুভূতির দ্বারা পরিচালিত হয়ে অসহায়-নির্যাতিত মানুষদের প্রতি শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিরন্তন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়াকে তিনি তাঁর জীবনের তথা একজন বিপ্লবীর জীবনের প্রকৃত কাজ মনে করতেন। আজ তাঁর ৮৯তম শুভ জন্মবার্ষিকী।

---

পৃথিবী থেকে শারীরিকভাবে বিদায় নেয়ার ৫০ বছর হয়ে গেলেও ‘চে’র প্রাসঙ্গিকতা আজো বিন্দুমাত্র কমেনি। এখনো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অজস্র নির্যাতিত-শোষিত মানুষের শোষণ মুক্তির লড়াই-সংগ্রামে প্রেরণার উৎস ‘চে’।
বিশ্বব্যাপী ‘চে’ নামে পরিচিত হলেও ‘চে’র প্রকৃত নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা ডি লা সেরনা। তাঁর কিউবান কমরেডরা নাম দেন ‘চে’। আর এই নামটিই বেশী পছন্দ করতেন ‘চে’। তিনি আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের উত্তর পূর্বে রোসারিও নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা লীনচ ও মা সেলিয়া ডি লা সেরনা। বাবা-মা দুজনেই ছিলেন মুক্তমনের অধিকারী। বাড়ীতে ছিল প্রচুর বই। ছোটবেলাতেই ‘চে’ দেখেছেন তাঁদের বাড়ীতে শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের আনাগোনা।

---

ফলে ছোটবেলা থেকেই ‘চে’ একটি সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হয়ে উঠেন। যখন তাঁর বয়স ১২ বছর তিনি হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হন, আর সারাজীবন এ রোগটি তাঁকে ভুগিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই তাঁকে লড়তে হয়েছে এ রোগটির সাথে। এর সাথে লড়তে লড়তে তাঁর মধ্যে প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি আর মানসিক দৃঢ়তা লাভ করে। পড়াশোনা ও খেলাধুলাতে বাবা-মা’র উৎসাহ ছিল প্রচন্ড। ফলে অল্প বয়সেই ‘চে’ বয়সের তুলনায় অনেক অগ্রসর বই-পত্র পড়ে ফেলেন এবং সেই সাথে ফরাসী ভাষাটাও রপ্ত করে ফেলেন। তিনি শৈশবেই সাঁতার, ঘোড়দৌড়, রাগবি, দাবা, শ্যুটিং, গলফ ও টেবিল টেনিস খেলায় পারদর্শি হয়ে উঠেন।
‘চে’ ১৯৪৬ সালে বুয়েন্স আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শাস্রে ভর্তি হন। প্রথম দিকে তাঁর আগ্রহ ছিল এলার্জি গবেষণায় এবং পরবর্তীতে তিনি একজন প্রখ্যাত গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি চাইতেন এমন কিছু করতে যা মানবতার সেবায় নির্ধারক ভুমিকা পালন করবে। তবে এসবই ছিল তখন ব্যক্তিগত অর্জনের বিষয়। ‘চে’র ভাষায় - ‘সকলের মতো আমিও ছিলাম পরিবেশের উৎপাদন’।
ছাত্রাবস্থায় নিজের খরচ চালাতে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকায় ভ্রমণরত কার্গোশিপে তিনি নার্সের কাজ করেছেন। একটি এলার্জি ক্লিনিকে তিনি বেশ ক’বছর গবেষণা সহকারী হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৫২ সালে দক্ষিণ আমেরিকায় ভ্রমণের সময় তিনি ও তাঁর বন্ধু আলবার্তো গ্রানাডো পেরুর কুষ্ঠ কলোনীতে কাজ করেন। স্নাতক পাশের পর ‘চে’ গুয়েতেমালায় ভ্রমণ করেন এবং সেখানে দু’বছর গ্রাম্য ডাক্তার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এসময় তিনি লাতিন আমেরিকার বিপ্লবে ডাক্তাররা কী ধরনের ভুমিকা রাখতে পারেন সে বিষয়ে একটি বইও লিখেন। চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে না নিলেও এ পেশার মাধ্যমেই জনগণের সাথে তাঁর প্রাথমিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে।
ডিসেম্বরের পরীক্ষার পর অন্যান্য ছাত্ররা যখন মার্চের পড়া ঝালিয়ে নিতে বইয়ের পাতায় বুদ হয়ে থাকত, স্বপ্নে বিভোর ‘চে’ তখন কাঁধে ব্যাগ বেড়িয়ে পড়তেন ভ্রমণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, উদ্দেশ্য - অভিজ্ঞতা সঞ্চয়। ১৯৫০ এ বাইসাইকেলে মোটর লাগিয়ে ‘চে’ বেড়িয়ে পড়েন আর্জেন্টিনার ৩ হাজার মাইল ভ্রমণে। ২৩ বছর বয়সী ‘চে’ ও ২৯ বছর বয়সী তাঁর বন্ধু আলবার্তো গ্রানাডা ১৯৫১ সালে বেড়িয়ে পড়েন লাতিন আমেরিকা ভ্রমণে। প্রথমে তাঁরা একটি ৫০০ সিসি নরটন মোটর সাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন, তাঁরা যার নাম দিয়েছিলন ‘লা পাদরসা’। পরবর্তীতে এই মোটর সাইকেলটি ভেয্গে পড়লেও স্বাপ্নিক তরুণ দু’জন ভেঙ্গে না পড়ে বিভিন্ন যানবাহনের সাহায্যে ভ্রমণ চালিয়ে যান। লাতিন আমেরিকার এই ভ্রমণের মাধ্যমেই ‘চে’ শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ-কষ্ট স্বচক্ষে দেখতে পান। এ সময় ঘটে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। চিলিতে তাঁদের সাথে এক দরিদ্র শ্রমিক দম্পতির সাক্ষাৎ ঘটে কমিউনিস্ট হওয়ার কারণে যাঁরা পুলিশের নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। তাঁদের অবস্থা এতই করুণ ছিল যে শীতের রাতে গায়ে দেয়ার জন্য একটিও কম্বল ছিল না। সেই রাতের ঘটনা ‘চে’কে অসহায় মানুষগুলোর সাথে নৈকট্য অনুভবের সুযোগ করে দেয়। নিছক আনন্দের জন্য শুরু করা ভ্রমণ শেষ হয় সমাজ পর্যবেক্ষণের এক গভীর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে, যা পরবর্তীতে ‘চে’ ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার মুক্তিকামী মানুষের সাধারণ লক্ষ্যের প্রতি বিশ্বাসী করে তুলেছিল।
চিকিৎসা শাস্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ‘চে’ দ্বিতীয়বার লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ শুরু করেন ১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে। এবার তাঁর সঙ্গী- কার্লোস ‘কালিকা’ ফেরার। তাঁরা বলিভিয়া ও পেরু হয়ে ইকুয়েডুর পৌঁছেন। সেখান থেকে কালিকা কারাকাসে চলে যান আলবার্তো গ্রানাডার সাথে দেখা করতে, আর ‘চে’ নৌকায় করে পানামা পৌঁছান এবং সেখান থেকে কোস্টারিকা ও হন্ডুরাস হয়ে গুয়েতমালায় যান। গুয়েতমালায় পৌঁছার পর ‘চে’র সাথে ৬ জন কিউবান গেরিলার সাক্ষাত ঘটে, যাঁরা ১৯৫৩ এর ২৬ জুলাই ‘সান্টিয়াগো ডি মানকাডা’ ব্যারাকের ব্যর্থ আক্রমণে অংশ নিয়েছিলেন। ‘চে’ তখন এই অভিযানের নায়ক ফিদেল কাস্ত্রো’র কথা শুনে অভিভূত হন। ফিদেল তখন পাইনস দ্বীপে বাতিস্তার জেলে বন্দী। গুয়েতমালাতেই হিলদা গাদিয়ার সাথে পরিচয় হয় ‘চে’র। হিলদা ছিলেন পেরুর রাজনৈতিক কর্মী, ‘চে’র থেকে ৩ বছরের বড় এবং রাজনৈতিকভাবে অনেক অভিজ্ঞ। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে ‘চে’ ও হিলদা বিয়ে করেন। হিলদার মাধ্যমেই ‘চে’র রুশ ধ্রুপদী সাহিত্য, জ্যাঁ পল সার্ত্রে ও চীনা বিপ্লবী মাও সেতং-এর লেখার পরিচয় ঘটে।
গুয়েতেমালায় তখন তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। প্রেসিডেন্ট জ্যাকাবো ১৯৫১ সালে অরবেঞ্জ মার্কিন ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানীর জমি অধিগ্রহণ করেন। এর ফলশ্রুতিতে হন্ডুরাস থেকে সিআইএ’র সমর্থন পুষ্ট হানাদার বাহিনী ১৯৫৪ সালে গুয়েতমালায় আক্রমণ করে। আক্রমণ প্রতিরোধ আন্দোলনে ‘চে’ অংশ নেন, কিন্তু সেই প্রতিরোধ ব্যর্থ হয়, অরবেঞ্জ পদত্যাগ করেন এবং পালিয়ে মেক্সিকো দুতাবাসে আশ্রয় নেন। ‘চে’ গুয়েতমালার এসব ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেন এবং আগ্রাসন বিরোধী সংগ্রামে আরো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠেন। অরবেঞ্জ সরকারের পতনের পর আরো অনেকের সাথে হিলদা গাদিয়া’রও জেল হয়, যদিও হিলদা খুব দ্রুত জেল থেকে বেরিয়ে মেক্সিকো চলে যান। ‘চে’ও সে সময় আলাদাভাবে মেক্সিকোতে পৌঁছান এবং ১৯৫৪ সালের অক্টোবরে হিলদা’র সাথে মিলিত হন।
১৯৫৫ সালে রাউল কাস্ত্রো’র সাথে মেক্সিকোতে ‘চে’র পরিচয় ঘটে। ফিদেল কাস্ত্রো’র ভাই রাউল ‘সান্টিয়াগো ডি মানকাডা’ ব্যারাকের আক্রমণে অংশ নিয়েছিলেন। ৮ জুলাই ফিদেল জেল থেকে মুক্ত হয়ে মেক্সিকো আসেন। ঠিক দু’দিন দুই মহান বিপ্লবী ‘ফিদেল’ ও ‘চে’র সাক্ষাত হয়, প্রথম সাক্ষোতেই তাঁরা প্রায় ১০ ঘন্টার বৈঠকে মিলিত হন। এই সাক্ষাতের পর ফিদেল ‘চে’কে তাঁর গেরিলা বাহিনীতে গ্রহণ করেন এবং এভাবেই ‘চে’ তাঁর ভাগ্যকে কিউবানদের সাথে পাকাপাকিভাবে ঘেঁথে ফেলেন।
১৯৫৬ সালের মার্চে কিউবায় হামলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ফিদেল কাস্ত্রো তাঁর গেরিলাদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেন। মেক্সিকো সিটির বাইরে এক পশু খামারে ছিল তাঁদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। কিন্তু একদিন মেক্সিকোর পুলিশ খবর পেয়ে হামলা চালিয়ে প্রশিক্ষণরত গেরিলাদের বন্দী করে ‘মিগুয়েল সুলজ’ বন্দীশিবিরে আটকে রাখে। যদিও ফিদেল ১ সপ্তাহ পর মুক্তি পান, আর ‘চে’ মুক্তি পান ৫৭ দিন পর।‘চে’ সেসময় মেক্সিকোতে একজন অবৈধ বিদেশী হিসেবে থাকার কারণে তাঁকে বিচারের জন্য বিদেশী সরকারের হাতে অর্পনের সম্ভাবনা ছিল। ‘চে’ চাইছিলেন তাঁর জন্য যেন বিপ্লেবের কোনো ক্ষতি না হয়। সেজন্য তিনি ফিদেলকে বলেন সে তাঁকে ফেলে যেতে পারে এবং তাঁকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন সেখান থেকে তিনি বিপ্লবে যোগদানের চেষ্টা করবেন। কিন্তু ‘চে’র এই প্রস্তাবের বিপরীতে ফিদেলে’র দৃঢ় উত্তর ছিল- ‘আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না’। এবং ফিদেল তাই করেছিলেন। মূল্যবান সময় ও অর্থ ব্যয় করে ‘চে’কে জেল থেকে বের করে আনেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই কমরেডদের প্রতি ফিদেলে’র গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রমাণ মিলে।
কিউবা আক্রমণের জন্য ৭ কেবিনেটের ৬৩ ফুট লম্বা একটা নৌকা কেনা হয়, যার নাম ছিল ‘গ্রানমা’। ১৯৫৬ সালের ২৫ শে নভেম্বর মেক্সিকো উপসাগরের টাক্সপান থেকে ৮২জন গেরিলা গ্রানমায় চড়ে কিউবা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। বিপ্লবীদের হিসেব অনুযায়ী পূর্ব কিউবার দক্ষিন পশ্চিম প্রান্তের ‘লা কলোরাডা’য় পৌঁছতে তাঁদের ৫ দিন লাগার কথা। আর তাই সেনাদের দৃষ্টি এড়াতে ৩০ নভেম্বর এক গনআন্দোলনের তারিখ নির্ধারন করা হয়েছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিপ্লবীরা ২ ডিসেম্বর গন্তব্যে পৌঁছেন। ফলে গেরিলাদের পূর্ব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। উপকূলে পৌঁছার সাথে সাথে গেরিলাদের উপর বিমান থেকে মেশিনগান দিয়ে আক্রমন চালানো হয়। সেখান থেকে গেরিলারা সিয়েরা মায়েস্ত্রো পর্বতে পালিয়ে গিয়েও মেশিনগানের আক্রমনে পড়েন। ‘চে’র গলায় ও বুকে গুলি লাগে। ৮২ জন গেরিলার মধ্যে ডিসেম্বরের শেষদিকে শেষপর্যন্ত মাত্র ১৫ জন টিকে থাকে।
ফিদেল বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালানোর জন্য সিয়েরা মায়েস্ত্রো পার্বত্য অঞ্চলকেই বেছে নেন। ৬,০০০ ফুট উচু এই পার্বত্য অঞ্চলটির বিশাল সবুজ বনাঞ্চল ছিল গেরিলাদের গা ঢাকা দিয়ে থাকার পক্ষে সম্পূর্নরূপে উপযুক্ত। তারপর এখান থেকেই শুরু হলো গেরিলাদের কঠিন, সংগ্রামী ও কষ্টকর বন্য জীবন। আর ক্রমাগত হেটে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ করে এগিয়ে যাওয়া, অপ্রতুল খাবার আর ওষুধের অভাব এই নিয়ে ছিল গেরিলাদের নিত্যদিনের সংগ্রাম।
সিয়েরা মায়েস্ত্রার অধিকাংশ কৃষক চরম দারিদ্র সীমার নীচে মানবেতর জীবন যাপন করত। চিকিৎসা ও শিক্ষার সুযোগ বিহীন এসব মানুষের জীবন ছিল আদিম ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। অপর পক্ষে বিদ্রোহী সেনারা ছিল শহুরে শিক্ষিত যুবক যাদের গ্রাম্য জীবন সম্পর্কে বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ সময় লাতিন আমেরিকায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কারণে গ্রামীণ জীবন ও মানুষের সঙ্গে ‘চে’র পরিচয় ছিল। ফলে তিনি সহজেই সিয়েরা মায়েস্ত্রার দরিদ্র কৃষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেন। তিনি গ্রামের লোকদের জন্য সাক্ষরতা অভিযান ও চিকিৎসা সেবা চালু করেন। ডাক্তার ‘চে’র সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
কিউবা বিপ্লবে ‘চে’ ডাক্তার হিসেবে যোগদান করেন। গেরিলা ডাক্তারের ভূমিকা সম্পর্কে ‘চে’ বলেন - “ডাক্তার (গেরিলা) পূর্নমাত্রায় একজন ধর্মযাজকের ভূমিকায় অবতীর্ন হন, যিনি তাঁর সামান্য ঔষধপত্রের ব্যাগে মানুষের জন্য সান্তনা বয়ে নিয়ে যান। একজন রোগাক্রান্ত মানুষের কাছে একটি অ্যাসপিরিনের মূল্য কত তা হিসেব করে বলা যাবে না।বিশেষত সেটি যখন এমন বন্ধুত্বপূর্ন হাতে দেয়া হয় যিনি তাদের দুর্ভোগকে অনুভব করেন ও নিজের করে নেন”।
দেড় বছর সংগ্রামের পর ১৯৫৮ সালের ২১ জুন বিদ্রোহীরা ‘এল জিগু’তে এক বিশাল বিজয় অর্জন করেন। ফিদেল ২১ আগষ্ট ‘চে’কে তার ৮ নং সেনাদল নিয়ে ‘লাস ভিলাসে’র দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। ‘চে’র দলে ছিল ১৪২ জন কমরেডের। কামিলো নেতৃত্ব দেন ২ নং সেনাদলকে। তিনি পশ্চিমের ‘পিনাল দেল’ প্রদেশের দিকে ৮২ জন কমরেড নিয়ে রওনা হন। ৪ দিনের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছার পরিকল্পনা থাকলেও ভ্রমণের জন্য নির্ধারিত ট্রাক গুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে ঘোড়ায় চড়ে ,তিনটি মাত্র লন্ঠনের সাহায্যে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে ‘চে’র কমরেডদের সময় লাগে ৪৭ দিন। ১৬ অক্টোবর ‘চে’ ‘এস্কেমব্রে’ পর্বতে পৌঁছান। পরিকল্পনা ছিল ‘সান্তাক্লারা’ দখলের মধ্য দিয়ে দেশটিকে দুইভাগে ভাগ করে ফেলা।
‘চে’ ১৮ ডিসেম্বর ‘ফোমেন্টো’তে এবং ২৩ ডিসেম্বর ‘প্লাসাটাসে’ গুরুত্বপূর্ন দু’টি যুদ্ধ জয় করেন। চারদিন পর ‘চে’ ‘সান্তাক্লারা’য় পৌঁছান। ২৯ ডিসেম্বর ‘চে’র বাহিনী হাভানা থেকে আগত সেনা ও অস্ত্র বোঝাই একটি রেলগাড়ি লাইনচ্যুত করে বিস্ফোরিত করেন। ১ জানুয়ারি ‘সান্তাক্লারা’ দখলে আসে এবং এর দুদিন পর ‘চে’ হাভানায় উপস্থিত হন। হাভানা গেরিলাদের দখলে চলে যায়। সফল হয় কিউবা বিপ্লব। কিন্তু প্রকৃত বিপ্লব তখনো শেষ হয়নি। গেরিলাদের কর্তৃক হাভানা দখল ছিল মূলত বিপ্লবের শুরু। বিপ্লবীদের কাছে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ ছিল নতুন সরকার গঠন করা ও দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পরাজিত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগনের মনে যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক আকাঙ্খা গড়ে উঠেছিল তা মেটানোর দায়িত্বও ছিল বিপ্লবীদের উপর।
১৯৫৯ এর জুনে ‘চে’কে বিদেশ সফরে পাঠান ফিদেল। ৩ মাসে তিনি ১২ টি দেশ সফর করে দেশে ফিরেন। দেশে ফিরে তিনি ‘জাতীয় কৃষি সংস্কার ইনস্টিটিউটের’ অধীনে শিল্পায়নের দায়িত্ব গ্রহন করেন। নভেম্বরে ‘চে’ সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হন। পরের মাসেই তিনি কৃষি সংস্কার আইন পাস করেন, এর ফলে ৪০০ হেক্টরের অধিক কৃষিখামার গুলো দখলীচ্যুত হয়। ফলশ্রুতিতে ইউনাইটেড ফ্রুটের মত মার্কিন একচেটিয়া কোম্পানীগুলোর সম্পদ জাতীয়করণ হয়ে যায়। ঠিক একই সময় কিউবার চিনির বিনিময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থঋন ও ভারী শিল্প তৈরীর প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসে। ফলে ‘চে’কে মন্ত্রী করে শিল্পমন্ত্রনালয় স্থাপন করা হয়। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিউবার তিক্ততা বাড়তে থাকে যা অর্ধশতব্দী পেরিয়ে গেলেও আজো বিদ্যমান।বিপ্লব পরবর্তী এই সময়টিতে বিপ্লবকে সুসংহত করতে ‘চে’ তাঁর মন প্রাণ ঢেলে কাজ করেছেন । তিনি দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা কাজ করতেন। শুধু রবিবারের বিকেলটাই ছিল সন্তান ও পরিবারের জন্য। ‘চে’ সবসময় দৃষ্টান্ত স্থাপনে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব শেষে স্বেচ্ছা শ্রম হিসেবে আখ খামারে কাজ করতেন। তিনি জানতেন জনগনের কাছাকাছি পৌঁছুতে হলে নিজেকে তাঁদের একজন ভাবতে হবে, জানতে হবে তারা কি চায়, তাদের কি প্রয়োজন। এ সম্পর্কে ১৯৫৯ সালে লাসভিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ‘চে’ তাঁর বক্তৃতায় বলেন- ‘আমাকে যদি জনগণ ও বিপ্লবী সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে এবং অবশ্যই তোমাদের অধ্যাপক হয়ে কিছু উপদেশ দিতে হয়, তবে আমি বলব, মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে হবে। তোমাদের জানতে হবে জনগণ কী চায়, তাদের কী প্রয়োজন, তারা কেমন আছে, কী ভাবছে।’
‘চে’ কিউবার মহান বিপ্লবকে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে বিশেষ করে তাঁর মাতৃভূমি আর্জেন্টিনাতে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটানো এবং এরজন্য তিনি পৃথিবীর যেকোন স্থানে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
১৯৬১ সালে ‘চে’ লাতিন আমেরিকায় বিপ্লব পরিচালনার জন্য গেরিলা যোদ্ধাদল সংঘটিত করতে শুরু করেন। সে সময় মুক্তিকামী লাতিন আমেরিকানরা দলে দলে হাভানায় আসতে শুরু করেন। কিউবান সবকারও ‘চে’র আগ্রহে আলজেরিয়া, নিকারাগুয়া, পেরু, গুয়েতমালা, ভেনিজুয়েলা ও আর্জেন্টিনার আন্দোলনে সহযোগিতা করতে থাকে। ‘চে’ তখন চাইছিলেন লাতিন আমেরিকা অভিযানে যেতে। কিন্তু সেখানে তখন গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য অনুকুল পরিবেশ ও পরিস্থিতি ছিল না। অপরপক্ষে কঙ্গোর মাটি ছিল গেরিলা যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ন প্রস্তুত। তাই ফিদেলের অনুরোধে ‘চে’ কঙ্গো যেতে রাজি হলেন। পরিকল্পনা ছিল ‘চে’ কঙ্গো থাকাকালীন পিনেইরোর লোকেরা লাতিন আমেরিকাতে গেরিলা যুদ্ধের জন্য পরিবেশ তৈরী করে রাখবে। অপরদিকে ‘চে’র গেরিলা যোদ্ধারা সেইসময় কঙ্গোতে সংঘর্ষের সময় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করবে এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধের জন্য নিজেদের দূর্বলতাগুলো দূর করার সুযোগ পাবে। সেই সাথে লাতিন আমেরিকার যুদ্ধের জন্য কারা উপযুক্ত ‘চে’ তাদেরও বাছাই করতে পারবেন।
‘চে’ ১৯৬৫ সালের ১ এপ্রিল তাঁর কঙ্গো অভিযানের জন্য কিউবা ছাড়েন। আর ফিদেলের জন্য রেখে যান তার সেই ঐতিহাসিক চিঠি। আবেক ভারাক্রান্ত সেই চিঠিতে ‘চে’ লিখেন ‘আমি পার্টি নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করছি, আমার মন্ত্রীর পদ, কমান্ডারের পদবী এবং কিউবার নাগরিকত্ব ত্যাগ করছি। কিউবার সঙ্গে আমার কোন আইনী সম্পর্ক আর থাকলো না, টিকে রইলো শুধু সেই বন্ধন যা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করা যায় না।’ ‘চে’ আরো লিখলেন- ‘অন্যকোনো ভূমি, অন্যকোনো দেশ আমাকে আহবান করছে যথাসাধ্য কাজের জন্য। সে আহবানে আমি সাড়াদিতে পারি, কিউবার অগ্রনায়কের দায়িত্ব পালনের কারণে তুমি তা পারো না। তাই আমাদের বিচ্ছেদের সময় ঘনিয়ে এসেছে।’ কিউবা ছেড়ে যাওয়ার সময় ‘চে’ তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেননি এবং এজন্য তাঁর কোন দুঃখও ছিল না কারণ তিনি জানতেন, ওদের খাওয়া-পড়া ও শিক্ষার ভার রাষ্ট্রই নেবে।
১৯৬৫ সালের ১৯ এপ্রিল ‘চে’ মস্কো, কায়রো ইত্যাদি শহর ঘুরে এসে নামেন দার-এস-সালামে। অবশ্য তখন তাঁকে ‘চে’হিসেবে চেনার কোনো উপায় নেই। মসৃনভাবে দাড়ি কামানো, চোখে সুদৃশ্য চশমা পড়া র্যা মন বেনিৎজ্ নামে ‘চে’ কঙ্গোতে প্রবেশ করেন। তবে ‘চে’ কঙ্গোতে ছিলেন মাত্র ছ’মাস। কঙ্গোর স্থানীয় কমিউনিস্ট পর্টি সহযোগিতা না করায় এবং স্থানীয় ভাষা ও মানুষের চরিত্র বুঝে উঠতে না পারায় ‘চে’র কঙ্গো অভিযান পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। তিনি অভিযানের ব্যর্থতা স্বীকার করে গেরিলা বহিনীকে দেশে ফেরত পাঠান। আর প্রাগ হয়ে হাভানায় ফিরে আসার পথে ডায়রিতে লিখেন- ‘যে জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে মনোবৃত্তি নেই, আমরা তাদের মুক্ত করতে পারি না।’
‘চে’র আত্মবিশ্লেষণ ছিল সত্যিকার অর্থেই একজন মার্ক্সবাদীর। নিজের ভুলগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষন করে লিখে রাখতেন। কঙ্গোর ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করে তিনি বই লিখেছেন যার নাম তিনি দিয়েছেন ‘পর্সাজাস ডি লা গুয়েরা রেভ্যুলুসানিয়া কঙ্গো’, প্রথম পাতায় লিখেছেন ‘ব্যর্থতার ইতিহাস’। ‘চে’র পরবর্তী গন্তব্য ছিল বলিভিয়া। বলিভিয়ার উদ্দ্যেশে কিউবা ছেড়ে যাওয়ার আগে ‘চে’ তাঁর স্ত্রী এলাইদা ও তাঁর সন্তানদের সাথে দেখা করার জন্য আসেন। পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে ‘চে’ তাঁর সন্তানদের কাছে নিজেকে তাঁদের পিতার বন্ধু র্যা মন বলে পরিচয় দেন।
সিআইএ’র চোখে ধুলো দেয়ার জন্য ‘চে’ মস্কো, প্রাগ, প্যারিস, মাদ্রিদ, সাও পাওলো হয়ে ১৯৬৬ সালের ৩ নভেম্বর বলিভিয়ার রাজধানী লাপাজে এসে পৌঁছেন। বলিভিয়া ছিল লাতিন আমেরিকার কেন্দ্রে, তাছাড়া তখন পর্যন্ত গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বলিভিয়ার মাটিই ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত, তাই বিপ্লব পরিচালনার জন্য বলিভিয়াকে বেছে নেয়া হয়। ফিদেল ক্যাস্ত্রোর নির্দেশে আগে থেকেই বলিভিয়ার দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার হেক্টরের বনভূমিতে একটি পশুখামার গড়ে তোলা হয় যার আড়ালে চে তার লাতিন আমেরিকার গেরিলাদের প্রশিক্ষণ দেবেন বলে ঠিক হয়। বন জঙ্গলের আড়ালে গেরিলাদের বেস ক্যাম্পটি ছিল খুবই সাদামাটা। সেখানে ছিল কাদামাটির তৈরী উনুন, হাতে তৈরী কাঠের টেবিল ও বেঞ্চ। মাটি খুড়ে তৈরী করা হয়েছিল পায়খানা। অস্ত্রশস্ত্র, ওষুধ ও নথিপত্র রাখা হতো হাতে তৈরী সুরঙ্গে। ‘চে’ তাঁর এই বিবর্ন ক্যাম্পে বসেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন বলিভিয়ার বিপ্লব দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়বে লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশে। বিপ্লবের সেই আগুনে পুড়ে ছাড়খার হবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। বলিভিয়া হবে আরেকটি ভিয়েতনাম। তবে ‘চে’র এই স্বপ্ন সত্যি হয়নি। দুঃখজনক ভাবে বলিভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি ‘চে’র গেরিলা যুদ্ধের কৌশলকে সমর্থন করেনি। বিশেষ করে পার্টির সেক্রেটারী মোঞ্জের বিশ্বাসঘাতকতা, বলিভিয়া সেনবাহিনীর আতর্কিত আক্রমণ, স্থানীয় কৃষকদের অসহযোগিতা, রসদ ও ওষুধপত্রের অপ্রতুলতা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ‘চে’র বলিভিয়ার বিপ্লব ব্যর্থ হয়।

দীর্ঘ ১১ মাস সংগ্রামের পর ১৯৬৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ‘চে’র গেরিলারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ‘চে’ নিজেও তখন অনেক অসুস্থ। ওষুধ আর খাবারের অভাবে গেরিলাদের অবস্থা মৃতপ্রায়। এমন অবস্থায় ৭ অক্টোবর গেরিলা দল ‘লা হিগুয়েরা’র কাছেই এক গিরিখাতে অবস্থান নেয়। দলে তখন মাত্র ১৭ জন গেরিলা। ৮ অক্টোবর গেরিলারা সেনাবাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়লে যুদ্ধ করে সেনাদের কেটে বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। যুদ্ধ শুরু হলে কিছুক্ষণের মধ্যে ‘চে’র কার্বাইনের ব্যারেলে গুলি লাগলে কার্বাইনটি অকেজো হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় গুলিটি লাগে ‘চে’র বাম পায়ে। ‘চে’র পিস্তলের ম্যাগজিনের গুলিও তখন শেষ। সম্পূর্ন নিরস্ত্র ও অসহায় অবস্থায় ‘চে’ পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু অল্প সময় পরেই আহত অবস্থায় ‘চে’ ও তাঁর সঙ্গী ‘উইলি’ ধরা পড়েন। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় ‘লা হিগুয়েরা’তে। ৮ অক্টোবর বলিভিয়া সেনাবহিনীর কর্নেল সেলিচ এবং ৯ অক্টোবর সিআইএ এজেন্ট এক দেশত্যাগী কিউবান ফেলিক্স রড্রিগ ‘চে’কে জেরা করে। তাদের পরবর্তী স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ‘চে’ তাদের সম্পূর্ন উপেক্ষা করেছিলেন এবং লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে বিপ্লব সফল হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন।
বলিভিয়ান হাই কমান্ড থেকে ‘চে’কে হত্যার নির্দেশ আসে। মেজর মিগুয়েল আইয়ো ও কর্নেল সেলিচ ‘চে’কে হত্যা করার জন্য নন কমিশন্ড অফিসার মারিও টেরানকে আদেশ দেয়। মদ্যপ টেরান ‘চে’র কোমরের নিচে তাক করে গুলি করে। গুলি করার পর ‘চে’ আরো ঘন্টাখানেক বেঁচে ছিলেন। ‘চে’কে যন্ত্রণা দেয়ার জন্যই ওর মাথায় বা বুকে গুলি না করে কোমরে গুলি করা হয়েছিল। এভাবে পরিকল্পিতভাবে ‘চে’র মৃত্যু যন্ত্রনাকে র্দীঘায়িত করা হয়। পরে এক মদ্যপ সার্জেন্ট পিস্তল দিয়ে বুকের বাঁদিকে গুলি করে এই মহান বিপ্লবীকে হত্যা করে। মৃত ‘চে’র দৃষ্টান্তমূলক শক্তির ভয়ে সামরিক কর্মকর্তারা ‘চে’ ও অন্য গেরিলাদের গোপনে গণকবর দেয়। কবর দেয়ার পূর্বে ‘চে’র দেহ থেকে তাঁর হাত বিচ্ছিন্ন করে রাসায়নিকের বোতলে ডুবিয়ে রাখে। ‘চে’র মৃতদেহকে বিকৃত করে শত্রুরা বর্বরতার শেষ সীমাও লঙ্ঘন করে ফেলে। আসলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চরিত্রটাই এমন। ওরা পৃথিবী জুড়ে মানবাধিকার ও শান্তির বার্তা প্রচার করে আর খনিজ তেল ও অস্ত্র বিক্রির স্বার্থে দেশে দেশে যুদ্ধ ও গণহত্যা চালিয়ে যায়।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চেয়েছিল ‘চে’কে হত্যার মধ্য দিয়ে ‘চে’র আদর্শকে এই পৃথিবী থেকে মুছে দিতে। কিন্তু ‘চে’কে দৈহিকভাবে হত্যা করা সম্ভব হলেও তাঁর আদর্শকে ধ্বংস করতে পারেনি সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজ লুটেরা শক্তি। আজো পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী ও মুক্তিকামী মানুষ ‘চে’র আদর্শকে ধারণ করে। ‘চে’র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় শোষিত মানুষ, গড়ে তুলে শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম। ‘চে’র আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই একদিন পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হবে শোষণহীন মানবিক সমাজ। ‘চে’ বেঁচে আছেন গণমানুষের হৃদয়ে, ‘চে’ বেঁচে থাকবেন গণমানুষের প্রতিটি মুক্তির লড়াই-সংগ্রামে।

লাল অভিবাদন, ‘কমরেড চে’!!
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হউক!!



এ পাতার আরও খবর

সিএমএসডি) কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পিয়ন সোহেল কোটি কোটি টাকা  ও পাঁচ তলা নির্মাণাধীন বাড়ির মালিক। সিএমএসডি) কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পিয়ন সোহেল কোটি কোটি টাকা ও পাঁচ তলা নির্মাণাধীন বাড়ির মালিক।
দুই মেগা প্রকল্প উদ্বোধনে রবিবার চট্টগ্রামে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী দুই মেগা প্রকল্প উদ্বোধনে রবিবার চট্টগ্রামে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
কুষ্টিয়ায় বিপুল পরিমান নকল ব্যান্ডরোলসহ সিগারেট আটক কুষ্টিয়ায় বিপুল পরিমান নকল ব্যান্ডরোলসহ সিগারেট আটক
প্রধানমন্ত্রী জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন
গাজীপুরে প্রেমের টানে এসে মার্কিন তরুণের ইসলাম গ্রহণ গাজীপুরে প্রেমের টানে এসে মার্কিন তরুণের ইসলাম গ্রহণ
মামলায় শিশুর নাম পরিচয় প্রচারে গণমাধ্যমকে সতর্কতা হাইকোর্টের মামলায় শিশুর নাম পরিচয় প্রচারে গণমাধ্যমকে সতর্কতা হাইকোর্টের
মুজিবনগরকে স্বাধীনতার তীর্থভূমি হিসেব গড়ে তুলতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ———–মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক. মুজিবনগরকে স্বাধীনতার তীর্থভূমি হিসেব গড়ে তুলতে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ———–মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক.
মেহেরপুরে উপজেলা পর্যায়ে সুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত মেহেরপুরে উপজেলা পর্যায়ে সুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
পর্যটকে মূখরিত মুজিবনগরের আম্রকানন পর্যটকে মূখরিত মুজিবনগরের আম্রকানন
দু:স্থ ও অসহায়রা যাতে ভাতা পান সেই চেষ্টা করা হবে- প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি দু:স্থ ও অসহায়রা যাতে ভাতা পান সেই চেষ্টা করা হবে- প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)